প্রবাসে শরত ঋতু
অরুন্ধতী ঘোষ
আমাদের অন্যান্য ঋতুর মতোই আমাদের ভীষণ প্রিয় একটি ঋতু, শরত। প্রতি বছর শরত তার ঝুলি ভরতি করে আনে নানা উপহার আমাদের জন্য। নীল আকাশে তুলোর মতো মেঘের রাশি, গাছে গাছে ফুলের বাহার-শিউলি, রঙ্গন, টগর করবী ইত্যাদি, ভোরের শিশির ভেজা ঘাস ও পথের ধারে ধারে কাশফুলের গুচ্ছ।সেই কবে দেখা, কিন্তু তবু শরতের কথা উঠলে মনটা অনেকদূরে চলে যায়, সেই বাংলায়, যেখানে শিউলিফুল, জলের ওপরে ভাসা পদ্ম ও ঢাকির বাজনা, পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেলে অধিষ্ঠিতা দেবী দূর্গার কাছে।
উত্তর আমেরিকায় কিন্তু দেশের মতোই বিভিন্ন ঋতু ঘুরে ফিরে আসে- বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরত ও শীত। শরতকালকে এদেশে আমরা “Fall” বলে থাকি। এইসময় সবুজ পর্ণমোচি গাছেদের পাতার রঙ বদলের ও পাতা ঝরানোর পালা।গাছেরা তাদের পাতা ঝরিয়ে শীতের চাদরে নিজেদের মোড়ে, আর বসন্তের প্রতিক্ষা করে। এই “Fall” এর সঙ্গে আমাদের দেশের শরত ঋতুর খুব একটা তফাৎ নেই। নীরব নীল আকাশে সাদা মেঘের সারি, ভোরের শিশিরে ভেজা ঘাস, অসংখ্য Fall flower, যা দিয়ে আমরা মা দূর্গাকে সাজাই, অঞ্জলী দিই।
এদেশে শরত আসে প্রকৃতিকে নতুনরূপে সাজাতে। একটু আগেই বলছিলাম গাছেদের পাতা ঝরানোর কথা। গাছেরা তাদের সবুজ পাতার রাশিকে হলুদ, কমলা, মেরুন, লাল নানা রঙ এ রাঙ্গিয়ে নেয়।যেন প্রকৃতিদেবী তাঁর রঙ ও তুলি দিয়ে নিজের খেয়ালে ছবি এঁকেছেন। প্রকৃতির এই রংখেলাকে আমরা “Fall Color”। এযেন পাতার ঝরার আগে প্রকৃতির প্রোগ্রামের “Grand Finale” ।
এবার কাশফুলের প্রসঙ্গে আসি। কাশফুল ছাড়া শরত অসম্পূর্ণ। আমাদের প্রবাসে কাশফুল না থাকলেও আমরা দেখতে পাই “Fall Grasses”- অনেকটা কাশফুলের মতো দেখতে, তবে রকমভেদ আছে। রাস্তার ধারে ধারে অসংখ্য এইরকম শরতের ঘাস এদেশের শরতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য।
প্রকৃতির এই রঙের উৎসব, কাশফুলের মতো এদেশের শরতের ঘাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় আসন্ন দূর্গাপুজার কথা। প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে আমরাও নিজেদের নতুন পোষাকে মুড়ে দূর্গাপুজায় মেতে উঠি।প্রবাসে মহালয়া শুনে দেবীপক্ষের শুরু হয় এবং বিভিন্ন শহরে দূর্গাপুজা পালিত হয় এক একটি উইকেন্ডে।